শনিবার ব্রিটেনে দুটি পৃথক সন্ত্রাসবিরোধী তদন্তে সাতজন ইরানি নাগরিকসহ মোট আটজন পুরুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, এদের মধ্যে পাঁচজনকে একটি "পূর্ব-পরিকল্পিত" অভিযানের অংশ হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই অভিযানে একটি নির্দিষ্ট ভবন বা স্থাপনার উপর হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে।
রচডেল শহরে এক ব্যক্তিকে সশস্ত্র পুলিশের মাধ্যমে একটি বাড়ি থেকে বের করে আনার দৃশ্য ভিডিওতে ধরা পড়েছে। অন্যদিকে, সোয়িনডনে আরেকজনকে রাস্তায় টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় তার হাতের উপর প্লাস্টিকের ব্যাগ পরানো অবস্থায় দেখা গেছে।
এছাড়া মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম কমান্ড (CTC)-এর নেতৃত্বে আরেকটি পৃথক তদন্তে লন্ডনে তিনজন ইরানি পুরুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
"বড় ধরনের সন্ত্রাস মোকাবিলার অংশ"
হোম সেক্রেটারি ইভেট কুপার বলেছেন, এই অভিযানগুলোতে শত শত পুলিশ ও কর্মকর্তা অংশ নিয়েছেন এবং এটি সাম্প্রতিক সময়ে "রাষ্ট্রবিরোধী ও সন্ত্রাসবিরোধী অন্যতম বড় অভিযানগুলোর একটি"।
CTC-এর প্রধান কমান্ডার ডমিনিক মারফি নিশ্চিত করেছেন যে এই দুটি তদন্ত একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত নয়।
তিনি বলেন, "এই অভিযানগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এমন বড় পরিসরের অভিযান আমাদের জন্য খুবই বিরল।"
গ্রেফতারকৃত পাঁচজনের মধ্যে চারজন ইরানি নাগরিক — যাদের বয়স যথাক্রমে ২৯, ২৯, ৪০ ও ৪৬ বছর। পঞ্চম ব্যক্তির জাতীয়তা ও বয়স এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
তাদের সোয়িনডন, পশ্চিম লন্ডন, স্টকপোর্ট, রচডেল এবং ম্যানচেস্টার থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তারা এখন পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ একটি বাড়িতে ঢোকার জন্য বিস্ফোরণ ব্যবহার করে। অন্য একটি ভিডিওতে অস্ত্রধারী ও হেলমেট পরিহিত পুলিশ সদস্যরা এক সন্দেহভাজনকে বাড়ির পাশ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
সোয়িনডনে ধারণকৃত একটি ভিডিওতে সাধারণ পোশাক পরা ও মুখ ঢাকা পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়, যারা এক ব্যক্তিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন যার হাতের উপর প্লাস্টিকের ব্যাগ পরানো ছিল।
ক্যাফেতে বসে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা
এক প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেন, ছয়জন পুরুষ একটি ক্যাফেতে ঢুকে এক সন্দেহভাজনের বিপরীতে বসে কফি ও ডোনাট অর্ডার করেন। পরে যখন ওই ব্যক্তি বাইরে যান, তখন তাকে রাস্তার পাশে ধরে ফেলা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ইংল্যান্ডজুড়ে অভিযান চালানোর কারণ ছিল একটি নির্দিষ্ট স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা, যদিও তারা সেই স্থানটির নাম প্রকাশ করেনি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে এবং পুলিশ তাদের সহায়তা করছে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেফতার
পাঁচজনের মধ্যে চারজনকে টেররিজম অ্যাক্ট অনুযায়ী এবং একজনকে পুলিশ অ্যান্ড ক্রিমিনাল এভিডেন্স অ্যাক্ট (PACE) অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয়েছে। সকলকেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রস্তুতির সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রচডেল অভিযানে সামরিক বাহিনীও সহায়তা করেছে বলে জানা গেছে।
এই তদন্ত মেট্রোপলিটন পুলিশের CTC-এর নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশ, উইল্টশায়ার পুলিশ এবং দেশজুড়ে অন্যান্য সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট কাজ করছে।
"অভিযান চলছে, তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে"
কমান্ডার মারফি বলেন: “তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং আমরা সম্ভাব্য মোটিভেশন ও জনসাধারণের জন্য কোনো বাড়তি ঝুঁকি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছি।”
তিনি আরও বলেন, “শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মী এই ঘটনায় দিনরাত পরিশ্রম করছেন।”
অন্যদিকে, লন্ডনে পৃথক আরেক অভিযানে ৩৯, ৪৪ ও ৫৫ বছর বয়সী তিনজন পুরুষকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ধারা ২৭ অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি বিদেশি শক্তির পক্ষ থেকে হুমকি হয়ে ওঠেন বলে সন্দেহ হয়, তবে পুলিশ তাকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করতে পারে।
"জাতীয় নিরাপত্তা এখনও চ্যালেঞ্জের মুখে"
হোম সেক্রেটারি কুপার বলেন, এই ধরণের গ্রেফতার ও তদন্ত আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির জটিলতা প্রতিফলিত করে।
তিনি পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “তারা দেশকে নিরাপদ রাখতে নিরলসভাবে কাজ করছেন।”
উল্লেখ্য, এমআই৫ প্রধান কেন ম্যাককালাম ২০২৩ সালে বলেছিলেন, ২০২২ সালের পর থেকে ইরান-সমর্থিত ২০টি সন্ত্রাসী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে, যেগুলো ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছিল।